ওজন কমানোর জন্য আপেল সিডর ভিনেগার এর উপকারিতা

79 / 100

ওজন কমানোর জন্য আপেল সিডর ভিনেগার

যখন শরীরের ওজন অতিরিক্ত বেশী তখন বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভবনা থাকে। ওজন কমানোর জন্য অনেক খাবারের কথাই বলা যায় এবং অনেক খাবারের মাধ্যমেই ওজন কমানো সম্ভব হয়। আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  (Apple cider vinegar) জন্য যথেষ্ট উপকারী। তবে কিছু খাবারের মাধ্যমে ওজন কমলেও পরবর্তীতে খাবারের অভ্যাস ছেড়ে দিলে আবার ওজন বেড়ে যায়। ওজন কমানোর জন্য যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। আপেল সিডার ভিনেগার মাধ্যমে ওজন কমালে পরবর্তীতে শরীরের ওজন দ্রুত বাড়ে না।

ওজন কমানোর জন্য আপেল সিডর ভিনেগার যে ভাবে প্রস্তুত করতে হবে:-

ওজন কমানোর জন্য আপেল সিডর যে ভাবে প্রস্তুত  করতে হবে তা নিম্নে আলোচনা করা হল:

উপকরণঃ

  1. তাজা আপেল ।
  2. বিশুদ্ধ পানি।
  3. ১ টেবিল চামুচ চিনি।
  4. ১ টি গ্লাস জার।

প্রস্তুত প্রণালী:

  • কাঁচের জারের ৭৫% পানি দিয়ে পরিপূর্ণ করতে হবে।
  • পানি ও চিনির মিশ্রণ তৈরী করতে হবে এবং আপেলের কিউব ঢেকে না যাওয়া পর্যন্ত উপাদান ঢালতে হবে।
  • পানি ও চিনির মিশ্রণ মিশাতে হবে আপেল কিউব পানিতে ঢেকে না যাওয়া পর্যন্ত।
  • পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুখ বেধ ১৪ দিন উষ্ণ ও অন্ধকার স্থানে রাখতে হবে।
  • প্রতিদিন একবার ঝাকাতে হবে।
  • জারের উপরের অংশে কোন কোন বাদামি অথবা ধূসর রংয়ের কিছু জমে থাকলে তা তুলে ফেলে দিতে হবে।
  • ১৪ দিন পর আপেল কিউব গুলো তুলে ছেকে নিতে হবে।
  • তারপর এটিকে ১৪-২৮ দিন উষ্ণও অন্ধকার স্থানে রাখতে হবে।

আপেল সিডার ভিনেগার কি?

আপেল সিডার ভিনেগার হল (গাঁজন) Ferment করা আপেল এর জুস । এই ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়া তৈরী হয় আপেল এর জুসের সাথে খামির (Yeast) আর ব্যাকটেরিয়া মিশিয়ে । এটি প্রথমে আপেরে জুসকে এ্যালকাহোলে পরিণিত করে এবং দ্বিতীয় ধাপে এ্যালকাহোলকে এসিটিক অ্যাসিড এ পরিণত করে। এখানে কিছু ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়, যেগুলো Acctobacteria নামে পরিচিত। এগুলোর ভেতর এসিটিক এসিড থাকার জন্য আপেল সিডার ভিনেগার খেতে টক হয়। এটির বর্ণ হালকা বাদামি রং এর হয়। এতে ভিটামিন, মিনরেল, অর্গানিক এসিড, পলিফেনল কম্পাউন্ডস, অ্যামিনো এসিড থাকে।

আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  জন্য যে ভাবে কাজ করে

সকাল বেলা খালি পেটে এই পানিটি আপনার শরীরের অনেক উপকারী। এটি আপনার হজম শক্তিকে উন্নত করে এবং খাদ্য হতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি আহরনে দেহকে সহায়তা করে। এই পানীয়টি মেটালিজম ক্ষমতা বাড়ায়। মেটাবোলিজম Rate কমের কারনে আপনি যা খাবেন সেটাই আপনার শরীরে জমা থাকবে ফলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। আবার যদি মেটাবোলিজম Rate বৃদ্ধি পায় তাহলে আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি  পাবে এবং যা খাবেন সেটা হজম হবে এবং শরীরে জমবে না। ফলে শরীরের ওজন কমে যাবে। এটি শুধু শরীরের ওজনই কমায় না, আপনাকে মিষ্টি খাওয়ার প্রতি আসক্ত কমায়। প্রতিদিন সকাল বেলা যদি এই পানীয় পান করা যায় সারা দিন অতিরিক্ত খাবার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।

আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  সাথে যে সব কাজ গুলো করে থাকেঃ

আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  পাশাপাশি অনেক উপকার করে থাকে। আমরা আজ আলোচনা করবো সে সব উপকার গুলো সম্বন্ধে।

গলা ব্যাথা দূর করতে

আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  পাশাপাশি গলা ব্যাথা দূর করতে যথেষ্ট উপকার করে থাকে। গলার ভেতর যখন ব্যাথা হয়, তখন আপেল সিডর ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন । আপেল সিডর ভিনেগার ইনফেকশন ছড়িয়ে যাওয়াকে প্রতিরোধ করে। কারণ অ্যাসিড যুক্ত পরিবেশে জীবাণু টিকতে পারে না। প্রতিদিন ¼ কাপ হালকা গরম পানিতে , ¼ কাপ আপেল সিডর ভিনেগার মিশিয়ে এক ঘন্টা পর পর কুলকুচা করলে গলা ব্যাথার জন্য অনেক ইপকার পাওয়া যাবে।

বদ হজম প্রতিরোধে সাহায্যকারী

আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  সাথে বদ হজম প্রতিরোধে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। এমন কিছু খাবার আছে যে গুলো খাওয়ার পর পেটে বদ হজমের সম্ভাবনা থাকে। এসব খাবার গ্রহণের পূর্বে ২ চামুচ আপেল সিডর ভিনেগার পান করুন। অন্য পদ্ধতি অনুসারে, এক গ্লাস হালকা গরম পানি , ১ চা চামুচ মধু এবং ১ চামুচ আপেল সিডর ভিনেগার মিশ্রণ করে খাবারের ৩০ মিনিট পূর্বে খেয়ে নিলে বদ হজম দূর করা সম্ভব।

কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে

আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  পাশাপাশি  কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় পরীক্ষিত যে আপেল সিডর ভিনেগার কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ২০০৬ সালে জাপানের গবেষকরা গবেষণা চালালে দেখা যায়, ভিনেগার এর অ্যাসিটিক অ্যাসিড রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এছাড়াও তারা গবেষনায় দেখেন যে, আধা আউন্স আপেল সিডর ভিনেগার নিয়মিত সেবনে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। সুতরাং আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  সাথে কোলেস্টরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

দাঁতের যত্নের জন্য

আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  পাশাপাশি  দাঁতের যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, দাঁতে দাগ ও হলদে ভাব হয়, মুখের ভেতরের দূরগন্ধ সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিদিন সকাল বেলা Apple cider vinegar পানির সাথে মিশিয়ে গার্ঘেল করতে হবে। এভাবে ১ সপ্তাহ ব্যবহার করলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

দূর্বলতা কমাতে

আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর পাশাপাশি  শরীরের দূর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। যখন আমরা ব্যায়াম করি তখন পেশিগুলোতে শক্তির প্রয়োজন হয়। এছাড়াও আপনি যখন অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন তখন প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। এসব চাহিদা মিটাতে আপেল সিডর ভিনেগার যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। আপেল সিডর ভিনেগারে রয়েছে পটাসিয়াম ও বিভিন্ন রকম এনজাইম যা দূর্বলতা দূর করতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে।

হাঁচি রোধ করতে

হাঁচি প্রতিরোধের আপেল সিডর ভিনেগার যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিদিন ১ চা চামচ আপেল সিডর ভিনেগার আপনার হাঁচি রোধ করতে পারে।

পটাসিয়ামের উৎস

পটাশিয়ামের ঘাটতির ফলে শরীরে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। অনেকে পায়ের নীচে ব্যাথার সৃষ্টি হয়। এটা মূলত পটাশিয়ামের অভাবে হয়। সেক্ষেত্রে আপেল সিডর ভিনেগার অনেক উপকারী। প্রতিদিন ২ চা চামুচ আপেল সিডর ভিনেগার ১ চা চামুচ  মধু গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে।

আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  খাদ্য নীতি

আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এটি ওজন কমাতে সক্ষম বলে, আপেল পেকটিন (pectin) এর গাঁজন (fermentation) কারণে হয় এবং এই পেকটিন (pectin) চর্বি কন্টেন্ট কমাতে সাহায্য আপেল সিডর ভিনেগার এ ৩০০০ – ৪০০০ মিলিয়ন ফলের অ্যাসিড রয়েছে যা ওজন হ্রাস করতে পারে। আপেল সিডর ভিনেগার শুধু চর্বি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় না । এটি ছড়িয়ে পড়া চর্বিকে দ্রুত হ্রাস করে। রক্তের লিপিড, চর্বিযুক্ত টিস্যুকে বিকশিত করে প্রসবের গতি বৃদ্ধি করে। এটি উপাদানের শোষন ঝিল্লি জালের পুনঃরুদ্ধার নতুন কোন পুষ্টি সম্পূরক ও চর্বি, দুই-উপায়ে প্রভাব, স্বাভাবিকের দ্রুত খরচ প্রতিরোধে । এ জন্য অন্ত্রের কোষের ঝিল্লি জাল উদ্ভিদ মধ্যে ফলের এসিড দিন দিন হ্রাস করে।

আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  জন্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা

বিশেষজ্ঞদের কাছে আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি পেটের খাদ্যের ওজন কমানোর প্রক্রিয়া কমিয়ে আনে। এছাড়াও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে প্রচুর পরিমাণে ইনসুলিন মুক্ত করতে সাহায্য করে থাকে।

আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  জন্য খাওয়ার নিয়মঃ আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  জন্য খাওয়ার নিয়ম নিম্নে আলোচনা করা হল

খাওয়ার নিয়মঃ

  1. প্রথমিক ভাবে দিনে ১ বার খাবেন। স্বাধের সাথে অভ্যস্ত হওয়ার পর দিনে ৩ বার খাওয়া যেতে পারে।
  2. ১ চা চামুচ ভিনেগার ১ কাপ পানিতে মিশিয়ে পান করতে হবে।
  3. খাবার খাওয়ার আগে খেতে হবে।
  4. কমপক্ষে ৩ মাস ধারাবাহিক ভাবে খেতে হবে।
  5. আপেল সিডর ভিনেগার পান করার সময় তেলে ভাজা খাবার, কার্বোনেট জাতীয় পানীয় পরিহার করা উচিত।
  6. নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
  7. যদি আপনি বাজার থেকে ক্রয় করেন তাহলে ৫% এসিডিটি আছে এমন আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর জন্য ক্রয় করুণ।

সুতরাং পরিশেষে বলা যায় যে, আপেল সিডর ভিনেগার ওজন কমানোর  জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষম খাবারের সাথে নিয়মিত আপেল সিডর ভিনেগার খাওয়া হলে অবশ্যই ওজন কমবে। তবে আপনাকে অবশ্যই খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply

x